বাংলাদেশ আনসার ব্যাটালিয়ন আবেদনের যোগ্যতা, কাগজপত্র,পরিক্ষার ধরন, বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আজকে বিস্তারিত জানবো। অসামরিক বাহিনীতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন আছে অনেকেরই। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত নিয়োগ হয়ে থাকে অসামরিক বাহিনীতে। বাংলাদেশ আনসার ব্যাটালিয়ন অসামরিক বাহিনীর একটি অংশ বিশেষ । ব্যাক্তির নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্যোগ মোকাবিলায়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রভৃতি এই দৃপ্ত শপথে বলীয়ান আনসার ব্যাটালিয়ন ১৯৪৭ সালে ভারতে গঠিত হয়।
আবেদনের যোগ্যতা Bangladesh Ansar
আবেদনের যোগ্যতা কমপক্ষে মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। অবিবাহিত ও বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে। সাধারণ পুরুষ ও অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, ওজন ৪৯.৮৯৫ কেজি ও বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩২-৩৪ ইঞ্চি হতে হবে। উপজাতি পুরুষের উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, ওজন ৪৭.১৭৩ কেজি এবং বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০-৩২ ইঞ্চি হতে হবে। দৃষ্টিশক্তি চাওয়া হয়েছে ৬ বাই ৬।
অগ্রাধিকার পাবেন অধিক উচ্চতাসম্পন্ন, শহীদ পরিবারের সদস্য, তালিকাভুক্ত আনসার-ভিডিপি সদস্য ও ক্রীড়াক্ষেত্রে পারদর্শীরা।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পদ পদবি, বেতন ও যোগ্যতা ২০২৪
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আবেদন পদ্ধতি
গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী যে কাগজপত্র লাগবে : প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা সত্যায়িত শিক্ষাগত যোগ্যতা, নাগরিকত্ব সনদ, চারিত্রিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রবেশপত্রের এক কপি ফটোকপিসহ মূল সনদ সঙ্গে নিতে হবে। অবিবাহিত মর্মে মেয়র অথবা কমিশনারের কাছ থেকে লিখিত আনতে হবে। পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা ছয় কপি সত্যায়িত রঙিন ছবি লাগবে। আনসার-ভিডিপির সদস্য, এতিমখানা নিবাসী ও উপজাতি কোটার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেওয়া সনদ লাগবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার জন্য প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সম্পাদিত হলফনামা অথবা সাকসেশন সার্টিফিকেট উপস্থাপন করতে হবে।
আবেদন পদ্ধতি: বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রিক্রুটমেন্ট পোর্টাল থেকে অনলাইনে আবেদন করতে হয় । আবেদন করার সময় রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ২০০ টাকা পোর্টালে বিকাশ বা রকেট অথবা মোবিক্যাশের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। আবেদন শেষে অনলাইনে প্রবেশপত্র দেওয়া হবে। এটি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করতে হবে এবং বাছাই পরীক্ষার সময় সঙ্গে নিতে হবে।
পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য যাবতীয় উপকরণ আপনার নিজেকেই আনতে হবে। যেমনঃ কলম, পেনসিল ও ক্লিপবোর্ড ইত্যাদি।
আনসার ব্যাটালিয়ন পরীক্ষার প্রস্তুতি
মেডিক্যাল টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ, বেতন-ভাতা, দুর্ঘটনা জনিত ভাতা, সকল বিষয় কিভাবে যাচাই-বাচাই করা হবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আমরা আপনাদের জন্য যারা বাংলাদেশ আনসার ব্যাটালিয়ন বা গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী যোগদান দিবেন অথবা অসাময়িক বাহিনি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাদের জন্য পুরো বিষয় জানতে পারবেন।
আনসার ব্যাটালিয়ন মেডিক্যাল টেস্ট
মেডিক্যাল টেস্টঃ শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় টেকার জন্য প্রার্থীকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত উচ্চতা ও ওজন ঠিক থাকতে হবে। এ ছাড়া বয়স, বুকের প্রস্থ ও ওজন ঠিক আছে কি না যাচাই করা হবে। শরীরের বিভিন্ন অংশে কোনো কাটা-ছিঁড়া বা শারীরিকভাবে কোনো ফ্র্যাকচার রয়েছে কি না পরীক্ষা করা হবে। দৌড়ের সময় দুই হাঁটু মিলে যায় কি না, হাতের আঙুল ঠিক আছে কি না—এসব বিষয় দেখা হবে। শারীরিক ফিটনেস পরীক্ষা করা হবে। এর জন্য অংশ নিতে হবে দৌড় প্রতিযোগিতা, হাই জাম্প, লং জাম্পে। এসব বিষয় ভালো করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। শারীরিক পরীক্ষার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরে যাওয়াই ভালো।
আনসার ব্যাটালিয়ন লিখিত পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষা: শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মিলবে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ। সাধারণত ৭০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়ে থাকে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে। পঞ্চম-দশম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের সিলেবাস অনুসারে প্রস্তুতি নিতে হবে। সুযোগ থাকলে বিগত বছরের প্রশ্ন সংগ্রহ করে দেখে নিতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলায় রচনা, ভাব-সম্প্রসারণ, এককথায় প্রকাশ, সন্ধিবিচ্ছেদ, বাগধারা বা সমার্থক শব্দ থেকে প্রশ্ন আসে। এ ছাড়া বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকের জীবন ও কর্ম, বিখ্যাত গ্রন্থের নাম, চরিত্রের নাম থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। কবি-সাহিত্যিকের উল্লেখযোগ্য উক্তি দিয়েও ব্যাখ্যা করতে বলা হতে পারে। ইংরেজিতে সাধারণত Fill in the Gaps, Tense, Noun, Pronoun, Adjective, Sentence Making, Translation থেকে প্রশ্ন আসে।
গণিতে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের পাটিগণিত ও বীজগণিত থেকে প্রশ্ন আসে। লসাগু-গসাগু, সুদকষা, শতকরা ও লাভ-ক্ষতি থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। সাধারণ জ্ঞানে সাধারণত প্রশ্ন কম আসে। এ বিষয়ে সমসাময়িক বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।
আনসার ব্যাটালিয়ন মৌখিক পরীক্ষা
মৌখিক পরীক্ষা আনসার ব্যাটালিয়ন: মৌখিক পরীক্ষায় বরাদ্দ ৩০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই শুধু মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে। প্রার্থীর কথা বলার ধরন, চিন্তাচেতনা, দেশপ্রেম, কঠোর পরিশ্রম করার স্পৃহা, বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কি না, তা দেখা হয়ে থাকে মৌখিক পরীক্ষায়। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল কম্পিউটার কাকে বলে | প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য
আনসার ব্যাটালিয়ন প্রশিক্ষণ ও বেতন-ভাতা
ব্যাটালিয়ন প্রশিক্ষণঃ আনসার ব্যাটালিয়ন নির্বাচিত হওয়ার পর ৬ মাসের প্রশিক্ষন গ্রহণ করতে হবে। এই ৬ মাস প্রশিক্ষন কালিন সময়ে দৈনিক ১৫০ টাকা করে প্রশিক্ষণ ভাতা পাবে। তাছাড়াও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাবে আনসার ভিডিপিরা।
বেতন-ভাতা: ব্যাটালিয়ন আনসাররা সমতলে ও পাহাড়ি এলাকায় কাজ করার সময় যথাক্রমে দৈনিক ৫১৬.৬৬ ও ৫৩৩.৩৩ টাকা হারে ভাতা পাবে। থাকছে ১০ হাজার টাকা করে বছরে দুবার উত্সবভাতা। আরো থাকছে সরকারি রেশন সামগ্রী এবং ফ্রি চিকিৎসা সেবা।
বাংলাদেশ আনসার ব্যাটালিয়ন দুর্ঘটনা জনিত ভাতাঃ কর্মরত অবস্থায় কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্য স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করলে অনুদান হিসেবে ৫০ হাজার টাকা ও দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করলে এক লাখ টাকার জীবন বীমা সুবিধা পাবে। কর্মরত অবস্থায় নিহত হলে তার পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত হলে দুই লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে।
আশা করছি, আপনারা আনসার ব্যাটালিয়ন, বেতন ও আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। Fastbdinfo সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।