স্বদেশপ্রেম রচনা ক্লাস ৮, ১০ সহ সকল ক্লাস এর জন্য। জন্মভূমি প্রতিটি মানুষের কাছেই প্রিয়। মা যেমন আদর স্নেহ মমতা দিয়ে আমাদেরকে লালন-পালন করে থাকেন, ঠিক তেমন ভাবে দেশ আমাদের ধরিত্রীর সন্তান হিসেবে বিশ্বমাঝে লালন করে। প্রতিটি মানুষ তার নিজের দেশকে ভালোবাসে। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসা মানব জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ।
দেশপ্রেম কী:
যে মা আমাদেরকে জন্ম দিয়ে থাকে তাকে যেভাবে আমারা ভালোবাসি ঠিক একইভাবে আমরা আমারদের দেশকেও সমানভাবে ভালোবাসি। দেশপ্রেম একটি মহৎ গুণ। জন্মগ্রহণ করা স্বভূমিকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করার পাশাপাশি সেই ভূমির সকল মানুষকে যদি ভালোবাসা যায় তবেই তাকে দেশপ্রেম বলা যাবে। নিজের দেশ, জাতি , ভাষা ও মানুষের প্রতি গভীর অনুভূতির নামই দেশপ্রেম বা স্বদেশপ্রেম। প্রকৃত দেশপ্রেমিক স্বদেশের প্রতি প্রচণ্ড দায়বদ্ধ থাকে ফলে স্বদেশের মঙ্গল হোক এমন সকল কাজ তিনি করতে পারেন। নিজের দেশকে ভালোবাসা এবং জন্মদাত্রী মাকে ভালোবাসা সমান। পৃথিবীর বিরাট এই আয়োজনে সৃষ্টি ও স্রষ্টা কে ভালোবাসার নামও দেশপ্রেম। যে দেশে আমরা জন্মগ্রহণ করি তার আলো-বাতাস আমাদেরকে তিলে তিলে বড় করে তোলে, সে দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সৃষ্টি হয়। দেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে আমরা দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে পারি। এর জন্যই প্রতিটিমানুষের কাছে জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও অধিক প্রিয় হয়ে ওঠে। দেশপ্রেম মানব জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আরো পড়ুনঃ সহজে মেয়েদের রাগানোর ও রাগ ভাঙ্গানোর উপায় ফেসবুক স্ট্যাটাস
দেশপ্রেমের প্রেরণা:
দেশকে ভালোবাসে (দ্বিজেন্দ্রলাল রায়) কবিতায় ফুটে তুলেন– এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি। নিজ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্যের সঙ্গে প্রতিটি মানুষের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেশকে ভালোবাসতে গেলে দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রথমে স্বীকার করে নিতে হবে। বিদ্যা শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। এমন কাজ করতে হবে নিজের অবস্থান থেকে দেশের সম্মান বৃদ্ধি হয় । এমন ভাবা যাবে না দেশকে ভালোবাসার জন্য অনেক অর্থবিত্তের প্রয়োজন আছে । মহৎ হৃদয় থাকতে হবে দেশকে ভালোবাসতে গেলে । ব্যক্তিভেদে দেশপ্রেমের প্রকাশ বিচিত্র রকম হতে পারে। দেশের বৃহৎ স্বার্থের জন্য যেমন আত্মত্যাগ করতে হতে পারে তেমনি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ সামষ্টিক ভাবে দেশের স্বার্থকে বৃহৎ করেতে পারে।
মানুষ তার অবস্থান অনুসারে, নিজের ক্ষমতা অনুসারে স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটাতে পারে। স্বদেশভূমি যখন বিপদের সম্মুখীন হয় দেশপ্রেম প্রকাশ এর সবচেয়ে উপযুক্ত সময় তখনই। দেশকে যে কোন বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একজন দেশপ্রেমিক সদা প্রস্তুত থাকে ।দেশকে ভালোবাসা দেশের প্রতি ঋণ শোধের উপায় মাত্র। দেশ প্রেমিক দেশের মানুষকে ভালোবাসে একইসঙ্গে দেশের গৌরব আকাঙ্ক্ষায় উচ্চাভিলাষী থাকে।
দেশপ্রেমের অনুভূতি:
দেশকে ভালোবেসে জীবন উৎসর্গ করেছেন যুগে যুগে দেশে দেশে সংগ্রামী মানুষরা। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে স্বদেশের জয়গান করেছেন, জয়গান করেছেন মানব কল্যাণে। সৌভাগ্যের বিষয় দেশের জন্য কাজ করতে পারা। একজন দেশপ্রেমিকের সবচেয়ে সুখের অনুভূতি তখনই সৃষ্টি হবে যখন তিনি স্বদেশের জন্য কোন অবদান রাখতে পারেন। দেশপ্রেমের অনুভূতি সংজ্ঞায়িত করা একেবারেই অসম্ভব এটি মানুষের চেতনাগত বিষয়। স্বদেশের গৌরব, সুনাম দেশপ্রেমিকের আনন্দ অনুভূতির কারণ হবে যদি এর বিপরীত হয় তা হবে দেশপ্রেমিকের জন্য বেদনার। দেশপ্রেমের অনুভূতি কবি জীবনানন্দ দাশ প্রকাশ করেছেন এভাবে-বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। ধর্ম, বর্ণ ,জাতি নির্বিশেষে মানুষ যখন মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে তখনই দেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়। দেশের ক্রান্তিকালে দেশের পাশে থাকার মাধ্যমেই স্বদেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
দেশপ্রেমের শিক্ষা:
ছাত্র জীবন দেশপ্রেমের প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের সময়। পিছুটান কম অনুভূত হয় ছাত্র জীবনে আমাদের। দেশের জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে এ বয়সীরা একেবারে পিছপা হয় না। ছাত্রজীবনে চিন্তার ধারা থাকে অত্যন্ত ক্ষুরধার ফলে দেশকে ভালোবাসার দীক্ষা এ সময়ে নেওয়া সবচেয়ে বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। দেশপ্রেমের মানসিকতা মানুষকে অর্জন করে নিতে হয়। আজকে যে ছাত্র সেই আগামী দিনের দেশ পরিচালনাকারী তাই ছাত্রজীবনেই দেশপ্রেমের মূলমন্ত্র গ্রহণ করতে হবে। এমন বলা যাবে না ছাত্রজীবন ব্যতীত দেশকে ভালোবাসার চিন্তা সম্ভব নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে শিক্ষা লাভ ছাড়াও অনেক উদাহরণ রয়েছে যারা প্রাতিষ্ঠানিক নিজের মধ্যে দেশপ্রেমের মন্ত্র দ্বারা নিজেকে উজ্জীবিত করেছে। তাই দেশপ্রেমের শিক্ষা মূলত আত্মবোধ থেকে সৃষ্টি ।
ছাত্রজীবনে স্বদেশপ্রেম :
ছাত্ররাই দেশের ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। দেশের উন্নতি ও জাতির আশা পূরণের আশ্রয়স্থল। তাই দেশ ও জাতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ছাত্রজীবনেই জাগিয়ে তুলতে হবে। দেশকে ভালোবাসার উজ্জীবন মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে। ছাত্রদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই দেশের স্বার্থে প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
দেশ প্রেম ও আমাদের কর্তব্য:
পৃথিবীতে মানুষের বসবাস উপযোগী করে তোলার জন্য বহু হৃদয়ের মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই দেশপ্রেমিক মানুষেরা তাদের আদর্শ স্থাপন করে রেখেছেন। এই মহৎ হৃদয়ের মানুষগুলো পৃথিবীতে করতে চেয়েছেন শান্তির নীড়। আমাদের কর্তব্য হলো মহৎ হৃদয়ের মানুষগুলোর আদর্শ ধারণ করে তাদের ভাবনা গুলোকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা যা দেশ ও সমগ্র বিশ্বের কল্যাণ বয়ে আনবে। দেশপ্রেমিক মানুষকে সম্মান জানাতে হলে তার আদর্শকে সম্মান দিতে হবে পাশাপাশি তার আদর্শ প্রচার ও প্রসারে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আজকের পৃথিবী থেকে হিংসা, হানাহানি, অশান্তি দূর করতে হলে আদর্শ দেশপ্রেমিকের চিন্তা চেতনা সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিপ্লবীদেশ দেশপ্রেম:
ব্রিটিশ সম্প্রদায় ভারতবর্ষে প্রায় ২০০ বছর শাসন করে গেছে। ভারতবর্ষে বিপ্লবীর দেশমাতৃকার এই পরাধীনতার জ্বালা সহ্য করতে পারেনি। তারা ইংরেজদের দেশ থেকে বিতাড়িত কর দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করেছে। তাদের দেশপ্রেম সত্যিই মনে রাখার মতো। নেতাজি, নজরুল, মাস্টারদা, সূর্যসেন, প্রফুল্ল চাকী, মহাত্মা গান্ধীর মতো দেশ প্রেমিক তৈরি করতে হলে ছাত্র জীবণ থেকেই তার অনুশীলন শুরু করতে হবে। দেশ প্রেমের মন্ত্রে তাকে দীক্ষিক করতে হবে। দেশ প্রেমর জাগরণ ঘটাতে হবে। শুধুমাত্র নিজেকে নিয়ে ভাবলে চলবে না তার ভাবনা হবে জাতির উদ্দেশ্যে দেশের উদ্দেশ্য দশেএর উদ্দেশ্যে ।একজন সঠিক দেশপ্রেমিক যেটা জাতিকে পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখে। আর যে জাতি স্বদেশকে ভালোবাসা সম্মান করে মর্যদা করে তার স্থান বিশ্বের সবার উপরে।
উরসংহার আত্মস্বার্থ ভুলে গিয়ে মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে তবেই একটা সুস্থ জাতি গড়ে উঠবে এবং সুস্থ জাতির মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হবে স্বদেশ প্রেমের চিন্তাধারা। উগ্র দেশপ্রেম বিপদের বাণী বয়ে নিয়ে আসে আর সে কারনেই দেশপ্রেমিককে হতে হবে উদার, সংকীর্ণতাহীন, মৈত্রী ও বন্ধুনে পরিপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ ১৫+ ভালো মানুষ নিয়ে উক্তি, ক্যাপশন, কবিতা ও স্ট্যাটাস ২০২৪
পরিস্থিতি ও স্বদেশপ্রেম:
আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের অর্থনৈতিক ও সমাজ জীবনে বৃহৎ পরিবর্তন এসেছে। যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবারে পরিণত হচ্ছে, গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাস করার প্রবণতা বাড়ছে। মানুষে মানুষে প্রাণের মিল বর্তমান সমাজে কমতে শুরু করেছে। প্রতিটি মানুষ শুধু নিজের কথাই চিন্তা করছে ফলে সমাজে একটি বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হচ্ছে। সামাজিক এমন পরিস্থিতিতে দেশপ্রেমের চেতনা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন। সমাজে বসবাসরত মানুষের কল্যাণ হয় এমন কাজ আমাদের করা উচিত। শুধু নিজের জন্য নয় দেশ ও দশের জন্য ভাবতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করা মানেই দেশের জন্য কাজ করা। তাই সংকীর্ণ মানসিকতা পরিহার করে দেশ ও জাতির কল্যাণের মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
স্বদেশপ্রেমের সংজ্ঞার্থ :
স্বদেশপ্রেম অর্থ হচ্ছে নিজের দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, ভাষার প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করা। দেশের প্রতি প্রবল অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা এবং যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলে। জন্মভূমির স্বার্থে সর্বস্ব ত্যাগের সাধনাই স্বদেশপ্রেম।
উপসংহারঃ প্রকৃত দেশপ্রেমিকের কাছে দেশের মঙ্গলই একমাত্র কাম্য। দেশের জন্য তাঁরা সর্বস্ব দান করতে পারেন।দেশপ্রেম একটি নিঃস্বার্থ ও নির্লোভ আত্মানুভূতি।
আশা করছি, আপনারা স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। Fastbdinfo সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।