পুলিশ এসআই সাব-ইন্সপেক্টর হওয়ার শারীরিক শিক্ষাগত যোগ্যতা, বেতন সুযোগ-সুবিধা, কাজ ও দায়িত্ব নিয়ে বিস্তারিত আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। কে না চায় নিজের ঘরে অন্তত একজন পুলিশের লোক থাকুক। পুলিশের ইউনিফর্মে আলাদা একটা ভাব ও মর্যাদা রয়েছে। এই ক্যারিয়ারে আছে চ্যালেঞ্জ, আছে অবিরাম সুযোগ, বৈধপথেই লাখ টাকা আয় সহ নানা সুবিধা অসুবিধা। তাই আজ জেনে নিব বাংলাদেশ পুলিশের এস.আই বা ‘সাব-ইন্সপেক্টর’এ যোগ দেয়ার শারিরীক যোগ্যতা,বাছাই পরিক্ষা এবং এস.আই এর সুযোগ-সুবিধা, বেতন ভাতা ইত্যাদি JCT Tube এর সৌজন্যে আজ জেনে নিন সেসব। আশা করি আপনার এই পোস্টির মাধ্যমে ভালো কিছু জানতে পারবেন। তো চলুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।
এসআই সাব-ইন্সপেক্টর
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ‘সাব-ইন্সপেক্টর’ (এসআই) পদে প্রতিবছরই বড়সংখ্যক জনবল নিয়োগ হয়। পুলিশ এসআই (নিরস্ত্র) বা ‘সাব-ইন্সপেক্টর’ পুলিশের এই পদটি সেকেন্ড ক্লাস গেজেটেড অফিসার। সাব-ইন্সপেক্টরকে পুলিশের বাহিনীর মেরুদন্ড বলা হয়। কারণ, তারা ইনভেস্টিগেশন অফিসার হিসাবে প্রায় সকল মামলার তদন্ত করা সহ মাঠ পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে। আর নিরস্ত্র মানে যারা মামলার তদন্ত করতে পারবে এবং অস্ত্র বহন করতে পারবে। যা সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী পারবে না।
আরো পড়ুনঃ নার্স কি কিভাবে হবেন | নার্সদের বেতন সুযোগ সুবিধা ২০২৪
পুলিশের এসআই হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা
সাধারণত প্রায় বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। স্নাতক বা অনার্স ডিগ্রিধারীরাই এসআই পদে আবেদনের সুযোগ পান। নিয়োগের বাছাই পরীক্ষা হয় ৪ ধাপে—
১. শারীরিক পরীক্ষা,
২. লিখিত পরীক্ষা-২২৫মার্ক: পরীক্ষা হয় ৩ দিন। প্রথম দিন মনস্তাত্বিক পরীক্ষা-২৫ মার্ক। দ্বিতীয় দিন বাংলা ও ইংলিশ-১০০ মার্ক। তৃতীয় দিন গনিত ও সাধারণ জ্ঞান-১০০ মার্ক।
৩. মৌখিক পরীক্ষা (১০০)। আর সব শেষে
৪. স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন (ভিআর)। শেষ ধাপ পর্যন্ত সফলভাবে টপকাতে পারলেই চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়া যাবে।
শারীরিক যোগ্যতা
গত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি। আর নারীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি।
বয়স ও উচ্চতার সঙ্গে ওজনের ভারসাম্য থাকতে হবে। প্রার্থীকে দৌড়, জাম্পিং ও রোফ ক্লিম্বিংয়ে অংশ নিতে হবে। এই ধাপ উতড়ালেই প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হবেন। আর প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে।
০৭ মার্চ ২০২১ এসআই সার্জেন্ট ও কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিধি মালা সংস্কার হয়। সংস্কারে বিশাল আকারে পরিবর্তন আসে।
যেমনঃ নির্বাচিত কোনো ব্যক্তি কোনোক্রমেই ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির কম উচ্চতা হতে পারবে না। বুকের মাপ ৩২ ইঞ্চি সাধারণ এবং বর্ধিতকরণ ৩৪ হতে হবে। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হতে পারে। তাদের ওজন অনুমোদিত মাপ হিসাবে হতে হবে।
বয়স: নিয়োগের নির্ধারিত তারিখে ১৯-২৭ বছর বয়স হতে হবে । বিশেষ ক্ষেত্রে ১৯-৩২ বছর।
নাগরিকত্ব: জন্মসূত্রে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক
পুলিশের এসআই এর বেতন সুযোগ-সুবিধাঃ
নির্বাচিত হওয়ার পর এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ চলাকালে মাসিক প্রশিক্ষন ভাতার পাশাপাশি বিনা খরচে খাওয়া, বাসস্থান, ইউনিফর্ম দেওয়া হয়।
একজন সাব-ইন্সপেক্টর ‘সরকারি বেতন স্কেল-২০১৫’ অনুযায়ী দশম গ্রেডের বেসিক ১৬০০০ থেকে ৩৮৬৪০ টাকা হারে বেতন পান।
এ ছাড়া বিনা মূল্যে পোশাক, রেশন, ঝুঁকিভাতা, চিকিত্সাভাতা, যাতায়াতভাতা, মামলা তদন্ত ভাতা মিলিয়ে প্রথম দিকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন।
আরো প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখ, ঈদ কিংবা পূজায় উত্সবভাতা পান। বেতন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারলে বিদেশে মিশনে যাওয়ারও সুযোগ মিলতে পারে। প্রতি ১ বছরের মিশনে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। সাধারণত চাকরি জীবনে ৩টার বেশি মিশন পাওয়া যায় না। মিশন বা প্রশিক্ষনের সুবিধার্থে বিনা খরচে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুযোগ থাকে।
যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতিও পাওয়া যায়। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে পদোন্নতি পেয়ে অ্যাডিশনাল এসপি বা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হওয়া যায়।
সেনাবাহিনীর সিএমএইচ এর মতো এতো উন্নত না হলেও পুলিশের জন্য রয়েছে রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতাল । খুবই গোছোনো, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, এই হাসপাতালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে আপনি আন্তরিক সেবা পাবেন । সবধরনের অপারশেন এর ব্যবস্থা এখানে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে । এখানে বড় সুবিধা হলো সব ধরণের ওষুধ এর পর্যাপ্ত সরবরাহ । কোন ওষুধ না পাওয়া গেলে প্রয়োজনে অর্ডার দিয়ে আনা হয় সেটা যত দূর্লভ আর দামিই হোক না কেন ।এই সুবিধা আপনি অন্য কোন জবে পাবেন না ।
আরো পড়ুনঃ অফিস পিয়ন, দফতরি, চাপরাশি, আর্দালি এদের কাজ কি?
এসআই এর কাজ ও দায়িত্ব
এখানে চাকরির বৈচিত্র্যতা আছে। আপনি চাইলে ইউনিফর্ম পরে থানায় ব্যস্ততম জীবন-যাপন করতে পারেন অথবা পুলিশের অন্য ইউনিট-এ সিভিলের মতো এসি রুমে ৯টা-৫টা অফিস করতে। পুলিশের এই চাকুরী মতো এতো বৈচিত্র্য আপনি আর কোন জবেই পাবেননা ।আপনি পুলিশিং ছাড়াও এখানে ইচ্ছে করলে শিক্ষকতা করতে পারবেন ট্রেনিং একাডেমী ও স্কুলে, পোশাক ভালো না লাগলে সাদা পোশাকে গোয়েন্দাগিরি, সি আই ডিতে কোন বিশেষ শাখায় গবেষণা থেকে আই টি বিভাগের এক্সপার্ট, পুলিশ হাসপাতালে ডাক্তারী থেকে ডিবির বোম্ব ডিসপোজাল টিমের টিম লিডার, ডেস্কজব থেকে শুরু করে রাস্তায় হরতাল ডিউটি আপনার ইচ্ছে এমন সবকিছু যা অন্য চাকুরীতে করতে চাইতেন তা এখানে পাবেন ।প্রত্যেক ইউনিটে আলাদা আলাদা পোশাক আপনাকে দিবে রুচি বদলের সুযোগ।
এপিবিএন থেকে স্পেশাল ব্রাঞ্চ, নৌ-পুলিশ থেকে টুরিস্ট পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশ থেকে জাতিসংঘ মিশনের সদর দপ্তর সব জায়গায় পদচারন করার সুযোগ থাকে সাব-ইন্সপেক্টরের । এছাড়া রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিনমজুর, প্রধানন্ত্রীর প্রটোকল থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি ভবন, সবার সরাসরি সেবা আপনি করতে পারবেন । খেলার সময় বিশ্বের নামী দামি খেলোয়ারদের নিরাপত্তা দিয়ে,কাছ থেকে দেখার ও সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন। আর একজন সাব-ইন্সপেক্টর হতে পারলে , তার জন্য পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা সু-নিশ্চিত।
পুলিশের এসআই-এর চাকরি কতটুকু অসুবিধা চ্যালেঞ্জিং
এতক্ষন অনেক সুবিধাই দেখলাম। দেখে তো খুব ভালো মনে হলো। আমাদের সবারই জানা যার যত সুবিধা, তার আবার কিছু হলেও অসুবিধা থাকে। তেমনই এই চাকরিতেও কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেমন:
১। চ্যালেঞ্জিং জব। সর্বদা বিচক্ষণ থাকতে হয়।
২। মাঝে মাঝে চরম বিরূপ পরিবেশে কাজ করতে হয়। আপনার সামান্য ভুলের কারণে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।
৩। আপনি সৎ হওয়া সত্বেও, কতিপয় লোক আপনার সমালোচনা করতে পারে। কারন বাইরে থেকে দেখা যাবে আপনি অন্যয় কাজ করতেছেন। কিন্তু আসলেই তা নয়। তো সভাবতই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
১। পূর্বে এসআই থেকে ইন্সপেক্টর(অর্থাৎ ওসি) এ প্রমোশন পেতে ১৫/১৬ বছর লেগে যেত। সরকারের আন্তরিকতায় বর্তমানে চাকরির মেয়াদ ৫ বছর ও ইন্সপেক্টরশীপ পাস করলেই প্রমোশন হয়ে যায়।
২। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর টু আইজিপি পর্যন্ত পদের রাঙ্ক ব্যাজ এক ধাপ উন্নতি করার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে।
এইছিল আজকের টপিক। আশা করি এই টপিকটির মাধ্যমে আপনার এসআই সর্ম্পকে মোটামুটি ধারনা পেয়েছেন। ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন।